করোনা স্বাস্থ্যবার্তা
নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমন চীনের উহান শহর থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ এ শুরু হয়ে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিস্তার লাভ করেছে। এপ্রিল,২০২০ পর্যন্ত বিশ্বে ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২ লক্ষের বেশি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশেও এই রোগের আশংকাজনক বিস্তার হচ্ছে। নভেল করোনার টিকা বা চিকিৎসা না থাকায় একমাত্র স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সচেতন আচরন এ রোগ থেকে আমাকে, আপনাকে এবং আমাদের সমাজকে নিরাপদ রাখতে পারে।
করোনাকালীন সময়ে করণীয়
- ঘরে অবস্থান করুন। নিরাপদ থাকুন, অন্যকে নিরাপদ রাখুন।
- পরিবারের শুধু একজন বাহিরে যাবেন জরুরী প্রয়োজন হলে। জনসমাগম যেমন – বাজার, ব্যাংক যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। খুব প্রয়োজন হলে গোছলের পূর্বে মাস্ক পড়ে বের হবেন (মাস্ক দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে)। নিরাপদ দূরত্ব (কমপক্ষে ৬ ফুট) বজায় রেখে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে।
- সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বর্তমান সময়ে পালন করা বা অংশগ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন।
- পরিবারের সদস্যদের সাথে সুন্দর সময় অতিবাহিত করার এটা একটা সুযোগ। ঘরোয়া খেলা, ঘরের কাজে সাহায্য, শিশুদের সাথে মনযোগসহ সময় দিন।
- সবাইকে করোনা বিষয়ক তথ্য দিন। সময় নিয়ে হাত ধোয়া, হাচি-কাশির সময় টিসু রুমাল বা হাতের কনুই ব্যবহার করা – নিজে করে অন্যদের মেনে চলার অনুরোধ করুন।
করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য
- জ্বর, কাশি, গলাব্যাথা হওয়া মানেই করোনা নয় ।
- পরিবারের কোন সদস্যের জ্বর, সর্দি কাশি, গলাব্যাথা ইত্যাদি হলে তাকে যথাসম্ভব আলাদা ঘরে রাখুন। বিশ্রামে রাখুন। রোগীর সেবাদানকারী শুধু রোগীর কক্ষে আসাযাওয়া করবে, অন্যরা নয়।
- রোগীকে মাস্ক ব্যবহার করতে দিন। যদি মাস্ক ব্যবহার না করতে পারে তাহলে হাচি কাশির জন্য রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করতে উৎসাহিত করুন। স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত জীবানুমুক্ত রাখতে হবে। সেবাদানকারী রোগীর সেবাকালীন সময়ে মাস্ক ব্যবহার করবে। সেবা শেষে সেবাদানকারী ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবে।
- রোগীকে বেশি করে পানি, শরবত (লেবুর শরবত দেয়া যেতে পারে) দিন।
- জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল (নাপা, এইস) জাতীয় ঔষধ দেয়া যাবে। গলা ব্যথা থাকলে কুসুম গরম পানি লবন দিয়ে গড়গড়া করা যেতে পারে।
- রোগীর ব্যবহার করা কাপড়, রুমাল প্রতিদিন ভালভাবে আলাদা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- প্রয়োজনে মোবাইলের (৩৩৩) মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ নিন।
- করোনা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘরে চিকিৎসা নিলেই ভাল হয়ে যায় । তাই ঘরেই থাকুন। তবে লক্ষন মারাত্মক হলে (শ্বাসকষ্ট হলে) রোগীকে করোনা নির্দিষ্ট (সিলেটে শহীদ শামসুদ্দিন সদর হাসপাতাল) হাসপাতালে নিতে হবে।
- করোনাতে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারের প্রতি কঠোরতা নয় ববং সহযোগীতা ও সহমর্মীতার হাত বাড়িয়ে দিন।
করোনাকালীন সময়ে বাজার
- ঘরে অবস্থান করুন। ঘরে থাকাই নিরাপদ। খুব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হবেন না।
- বাজার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। পরিচিত দোকানের ফোন নাম্বার সংরক্ষন করুন। ফোন করে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা দিয়ে দিন এবং অনুরোধ করুন সংগ্রহের জন্য ফোন করে জানাতে (যদি সম্ভব হয় বাসায় ডেলিভারী দিতে বলুন)।
- খুব প্রয়োজন হলে গোছলের পূর্বে মাস্ক পড়ে বের হবেন (মাস্ক দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে)। নিরাপদ দূরত্ব (কমপক্ষে ৬ ফুট) বজায় রেখে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে।
- বাইরে বের হয়ে ভিড় এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে সময় নিয়ে অপেক্ষা করুন নিরাপদ দূরত্বে। জনসমাগম থেকেই করোনা দ্রুত ছড়ায়। যে সময়ে ভিড় কম থাকে এমন সময় বেছে নিন।
- জুতা ঘরের বাইরে রাখুন। বাইরে থেকে ফিরে গোছল করে নিন এবং ব্যবহৃত কাপড় ধুয়ে নিন।
করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একদিনে যাতে কম সংখ্যক কর্মচারী কাজ করে তা নিশ্চিত করুন। কর্মচারীদের মধ্যে দিন ভাগ করে ব্যবসা পরিচালনা করুন। একজন থেকে আরেকজন যাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে (কমপক্ষে ৬ ফুট) কাজকরে তা নিশ্চিত করুন।
- কর্মচারীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করুন। হাত দিয়ে নাক, মুখ ও চোখ যাতে স্পর্শ না করে এজন্য পরামর্শ দিন।
- হাত পরিষ্কারের জন্য স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা করুন অথবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করুন। কাজের ফাকে ফাকে সবাইকে হাত ধোয়ার জন্য বলুন এবং নিশ্চিত করুন।
- আপনার প্রতিষ্ঠানের ফোন নাম্বার আপনার কাস্টমারদের সরবরাহ করুন এবং অনুরোধ করুন ফোন করে অর্ডার দেয়ার জন্য। সম্ভব হলে ডেলিভারির ব্যবস্থা করুন অথবা মালামাল রেডি হলে ফোন করে ডেলিভারি নেয়ার জন্য অনুরোধ করুন।
- কাস্টমারদের মাস্ক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করুন। বিক্রির জন্য মাস্ক রাখুন।
- কাস্টমারের উপস্থিতি বেশি হলে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা ও ফোন নাম্বার রেখে কাস্টমারকে বলুন তার অন্য প্রয়োজন থাকলে সেরে নিতে। রেডি হলে ফোন করে তাকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের অনুরোধ করুন।
- কাজ থেকে বাসায় ফিরে সাথে সাথে গোছল করে নিন। ব্যবহৃত কাপড় ধুয়ে নিন।
- প্রতিষ্ঠানের কারো জ্বর, সর্দি কাশি হলে বাসায় থাকতে পরামর্শ দিন । জ্বর সর্দি ভাল হয়ে যাওয়ার কমপক্ষে ৫ দিন পর থেকে কাজে আসতে নির্দেশ দিন।
করোনা দুর্যোগ প্রতিরোধে সক্রিয় অংশগ্রহন করুন। নিজে নিরাপদ থাকুন, নিজ পরিবারকে নিরাপদ রাখুন এবং অন্যকে নিরাপদ রাখুন। ঘরে থেকে এই প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহন করুন।
রিসার্চ সেল,
মাউন্ট এডোরা হসপিটাল